এই বছর ২৫ শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) ১৬০ তম জন্ম জয়ন্তী পালিত হচ্ছে। প্রায় মাস খানেক আগে থেকে রাজ্য জুড়ে রবীন্দ্রজয়ন্তীর পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। যদিও করোনা অতিমারীর কারণে ২০২০ থেকে সেই প্রস্তুতিতে বেশ কিছুটা ভাটা পড়েছে।
বাঙালি মননে বেঁচে আছেন রবি ঠাকুর। অনেকে আবার মনে করেন উনবিংশ শতাব্দীতেই তিনি ছিলেন সময়ের থেকে এগিয়ে। কিছু প্রোগেসিভ মনে করেন এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে রবি ঠাকুর অত্যন্ত 'সেকেলে'। তিনি প্রোগ্রেসিভ না ব্যাকডেটেট -তা নিয়ে বিস্তর মতান্তর থাকতেই পারে। কিন্তু আপামর মধ্যবিত্ত বাঙালি জাতির দৈনন্দিন জীবনে তিনি কতটা প্রাসঙ্গিক বর্তমান সময়ে? রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপনেও কি রয়েছে সেই আন্তরিকতা -আনন্দ? আজতক বাংলায় এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক কবীর সুমন (Kabir Suman)।
প্রশ্ন: আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে যেভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন হত, এখন কতটা পরিবর্তন হয়েছে?
কবীর সুমন: সাধারণ মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা কোনও দিনও ছিল কি? সাধারণ মানুষ মানে আমি আমাদের দেশের চাষি, জেলে, তাঁতি, কৃষক, নাপিত, এদের কথা বলছি। বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীরাই মাথা ঘামিয়েছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। মানুষের কাছে তো তিনি পৌঁছতেই পারেননি।
প্রশ্ন:কারা পৌঁছতে দেননি মানুষের কাছে?
কবীর সুমন: মধ্যবিত্ত শ্রেণীই! আমাদের দেশ যেখানে এত পিছিয়ে রয়েছে, সেখানে রবীন্দ্রনাথ তো কোনও দিনই সেভাবে সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। পাঠ্য-পুস্তকে যা থাকতো তাই লোকে পড়তো। গান লোকে গেয়েছে- শুনেছে, এটুকুই।
প্রশ্ন: রবীন্দ্রনাথের গানের তো এখন অনেক আধুনিকীকরণ হচ্ছে। অনেকেই ভাল চোখে দেখছেন না...আপনার কী মত?
কবীর সুমন: আমার বাবা-মা দু'জনেই রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন ১৯৩০-র সময়কালে। আমার বাবা রবীন্দ্রনাথের ট্রেনিংয়ে গানও গেয়েছেন। সেই সময় তো পিয়ানো বা অন্যান্য অনেক ইন্সট্রুমেন্ট সবই বাজতো। আর প্রত্যকটা যুগ নিজেদের মতো করে তাঁকে বুঝে নেয়। সব তো স্ট্যাটিক থাকে না। আমার ঠাকুমা যেভাবে রান্না করতেন, আমি বা আমার বান্ধবী তো সেভাবেই রান্না করি না। সব কিছুই পাল্টায়। তাই গানের ভাবটা ঠিক থাকা নিয়ে কথা।
প্রশ্ন: এর আগে আপনি বললেন "আমাদের দেশ এত পিছিয়ে..." কী কারণে সেটা মনে হয়?
কবীর সুমন: যারা এই দেশ শাসন করছেন তাঁরা কীভাবে কথা বলছেন সবাই জানে! এই যে একটা ভোট হল, তার আগে- পরে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে 'ভদ্রলোক সিপিএম'-রা কী না বলেছে! চটি মাসি, পিসি... বিজেপি এখানে এসে 'দিদ্দি...দিদ্দি...' করছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এসব বলছে। এটা কী? রবীন্দ্রনাথ তো ছেড়েই দিন!
প্রশ্ন: সেটা তো দেশের কথা। বাঙালিরা তো তাঁকে ভালবাসেন...
কবীর সুমন: তাহলে এই রাজ্যের যিনি বস, দিলিপ ঘোষ, কী ভাষায় কথা বলেন তিনি? 'রোগড়ে দেবো!', 'মোড়ে মোড়ে শীতলকুচি হবে'! এখানে আপনি রবীন্দ্রনাথকে খুঁজবেন? এটা একটা দেশ? তথাগত রায়! তিনি একজন বড় কলেজের পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার। একজন অত্যন্ত শিক্ষিত লোক, তিনি কী ভাষায় কথা বলেন। তাহলে?
প্রশ্ন: তাহলে কী এরাজ্য রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিকই নয়, আপনার মতে? এত জায়গায় রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন হয় যে?
কবীর সুমন: তা তো বলিনি! আগে ওই গুলো ঠিক করুক। তারপর না হয় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে চর্চা হবে। বাংলা ভাষাটাই তো উঠে গেছে! সেখানে কী রবীন্দ্র চর্চা হবে? ওই একটা লোক দেখানো ব্যাপার হয়।
প্রশ্ন: কিন্তু বাঙালির তো গর্ব রবীন্দ্রনাথ!
কবীর সুমন: বাঙালি মধ্যবিত্তের বলা যায় কুৎসিত, কদাকার, ঘৃণ্য অবস্থা। সেখানে রবীন্দ্রনাথ কেন বাংলা ভাষা, বাঙালির শিষ্টাচারের কথা আগে বলা হোক। তারপর না হয় রবীন্দ্রনাথের কথা ভাবা যাবে...